চিকিৎসক গ্রেপ্তার: চেম্বারে রোগী দেখা ও অস্ত্রোপচার বন্ধ দেশজুড়ে

0
193

সূত্র: bangla.bdnews24.com

সেন্ট্রাল হাসপাতাল, ঢাকার চিকিৎসক ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও ডা. মুনা সাহাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গাইনি ও প্রসূতিবিদ চিকিৎসকদের সংগঠন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনিকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) এ কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছিল গত শনিবার। চিকিৎসকদের এই কর্মসূচীর ফলে সোমবার এবং মঙ্গলবার কার্যত দেশের বেশিরভাগ মানুষ বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা পাবেন না।

সম্প্রতি ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর নবজাতক ও প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সোম ও মঙ্গলবার দুদিন ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা এবং অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখছেন সারা দেশের গাইনি চিকিৎসকরা। গাইনি চিকিৎসকদের এই কর্মসূচিতে একাত্মতা জানিয়েছে চিকিৎসকদের অন্যান্য সংগঠনগুলোও। অর্থাৎ চিকিৎসা খাতের প্রায় সব চিকিৎসক তাদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা এবং অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখবেন এ দুই দিন। ফলে সোম এবং মঙ্গলবার কার্যত দেশের বেশিরভাগ মানুষ চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসা সেবা পাবেন না। তবে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকরা সেবা দেবেন বলে সংগঠনগুলোর তরফ থেকে জানানো হয়েছে।

সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও ডা. মুনা সাহাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গাইনি ও প্রসূতিবিদ চিকিৎসকদের সংগঠন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনিকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) এ কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছিল গত শনিবার।

সোসাইটি অব সার্জন, বাংলাদেশের সভাপতি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম সোমবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সোমবার ও মঙ্গলবারের কর্মসূচিতে আমরা ওজিএসবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছি। সোম ও মঙ্গলবার ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ রাখব। পাশাপাশি সেখানে কোনো ধরনের অস্ত্রোপচারও হবে না। এটা শুধু চেম্বারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা চালু থাকবে, অস্ত্রোপচারও হবে।”

বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, সোসাইটির সদস্যরা ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ রাখবেন। তবে জরুরি পরিস্থিতে রোগী ফেরানো হবে না।

“আমরা কর্মসূচি পালন করব। কিন্তু গতকাল আমাদের মিটিং ছিল। সেখানে বলেছি জরুরি কোনো রোগী এলে তাকে চিকিৎসা দিতে হবে। সেটা চেম্বারে হলেও। এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ চলছে এটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। ইমার্জেন্সি রোগী যেন এফেক্টেড না হয়, কিন্তু রুটিন কেইস দেখব না।”

চিকিৎসক সংগঠনগুলার নেতারা জানিয়েছেন, অনেক চিকিৎসক বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও রোগী দেখেন। সেসব চেম্বার বন্ধ থাকলে বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হবে।

এখন পর্যন্ত সোসাইটি অব সার্জনস, বাংলাদেশ; বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন, বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতি; মেডিকেল অনকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ; বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেস্থিসিওলজিস্টস ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যান্ড পেইন ফিজিশিয়ান্স; অ্যাসোসিয়েশন ফর দি স্টাডি অব লিভার ডিজিজেস বাংলাদেশ; বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটি; সোসাইটি অব অটোলারিঙ্গোলজিস্ট অ্যান্ড হেড নেক সার্জনস অব বাংলাদেশ, সোসাইটি ফর মেডিকেল ভাইরোলজিস্টস, বাংলাদেশ; বাংলাদেশ একাডেমি অব প্যাথলজি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হেপাটোলজি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন একাত্মতা জানিয়েছে ওজিএসবির কর্মসূচির সঙ্গে।

কর্মসূচি নিয়ে এসব সংগঠন পৃথক বিবৃতি এবং সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। সবগুলো সংগঠনের সদস্যদের প্রতি নির্দেশনাও মোটামুটি একইরকম। সংগঠনের সদস্যদের কর্মসূচি যথাযথভাবে পালনের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

কর্মসূচির অংশ হিসেবে রোববার দেশজুড়ে মানববন্ধন করেছেন গাইনি চিকিৎসকরা। মঙ্গলবার কর্মবিরতির শেষে আবার বিএমএর সঙ্গে বসে পরবর্তী আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে গাইনি চিকিৎসকদের সংগঠনটি।

যে ঘটনায় এই কর্মসূচি

স্বাভাবিক উপায়ে সন্তান জন্ম দিতে গত ৯ জুন সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কৃমিল্লার প্রসূতি মাহবুবা রহমান আঁখি। সেখানে পরদিন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার সন্তানের জন্ম হয়। ওই নবজাতক সেদিনই মারা যায়। এরপর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আঁখিকে পাশের ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়; যেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ জুন মারা যান তিনি।

এ ঘটনায় আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে মামলা করলে পুলিশ সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুই চিকিৎসক ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও ডা. মুনা সাহাকে ১৫ জুন গ্রেপ্তার করে। এখনও তারা কারাগারে আটক আছেন। জামিন চেয়ে করা তাদের একাধিক আবেদন নাকচ করে দিয়েছে আদালত। কুমিল্লার গৃহবধু আঁখি সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক সংযুক্তা সাহার অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

বিঃদ্রঃ পদ্মা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসপাতাল রোড, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সারা বাংলাদেশ ব্যাপী উপরোক্ত কর্মসূচীর সাথে একাত্মতা ঘোষনা করছে। তবে, সকল চিকিৎসক সংগঠনগুলোর সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইমার্জেন্সি কোনো রোগী এলে আমরা তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাব ইনশাআল্লাহ; কারন ইমার্জেন্সি রোগী যেন এফেক্টেড না হয়। কিন্তু রুটিন কেইস দেখা হবে না। সাধারন রোগীদের সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here